কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীব্র ভাঙ্গন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, সদর উপজেলা ও তিস্তার ভাঙ্গনে রাজারহাট উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ব্রহ্মপুত্রের বামতীরের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় ৩৫টি গ্রামে একযোগে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। জুলাই মাস থেকে এই দু’টি উপজেলার প্রায় ৭শ’টি বাড়ী-ঘর, কাঁচা-পাকা সড়ক, মসজিদ, মাদ্রসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ ফসলীয় জমি নদের গর্ভে বিলিন হয়েছে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙ্গনে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া, বলদিয়াপাড়া, গারুহারাসহ পাশ্ববর্তী গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি তিস্তার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে।
রৌমারী উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো হলো ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, পূর্বখেরুয়ারচর, পূর্ব খেদাইমারী, উত্তর খেদাইমারী, পশ্চিম পাখিউড়া, পাখিউড়া, পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাগুয়ারচর ,বাইসপাড়া, বলদমারা, পূর্ব বলদমারা, ধনারচর, ধনারচর নতুন গ্রাম,  দিগলাপাড়া, তিনতেলী।
রাজিবপুর উপজেলার শঙ্করমাদবপুর, সাজাই, চরসাজাই, বল্লাপাড়া, উত্তর কোদালকাটি, নয়ারচর, নয়ারচর বাজার, মাঠের ভিটা, লাউশালা, টাঙ্গইলাপাড়।
প্রতি বছর নদের ভাঙ্গনের ফলে গ্রামের পর গ্রামের ঘর-বাড়ী ফসলী জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাব দাদার ভিটে মাটি হারিয়ে পরিনত হচ্ছে ভূমিহীনে।
এসব পরিবার সব কিছু হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন উচুঁ বাঁধ, অন্যের জমি ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন রোধে জরুরী কোন পদক্ষেপ না নিলে অদুর ভবিষৎতে রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
রৌমারী উপজেলার বলদমারা গ্রামের হামিদা খাতুন জানান, আমাগো আবাদি জমি নাই, সব নদীতে ভাঙ্গয়া গেছে, ঘাট পাড়ে দোকান করে খাইছি তাও নদীতে ভেঙ্গে গেছে।
রৌমারীর পশ্চিম বাগুয়ারচর গ্রামের কোরবান আলী জানান, এক বছরে আমরা দুই বার বাড়ী টান দিছি, এখন আর বাড়ী নেওয়ার জমি নাই, আমাগো একটাই দাবী নদী বেধে দেন, আমরা রিলিপ চাইনা, নিজে জমিতে ঘর তুইলা শান্তিতে পোলাপান নিয়া থাকবার চাই।
রৌমারী উপজেলা কর্মরত সিএসডিকে এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু হানিফ মাস্টার বলেন, গত পাঁচ বছরে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার  প্রায় ৫০হাজার পরিবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে।
এইসব পরিবারের একটি বড় অংশ ঢাকা শহরসহ দেশের  বিভিন্ন শহরে বস্তিতে বসবাস করছে। উদবাস্ত পরিবারের পূর্নবাসন ও নদী ভাঙ্গন রোধ না করলে আগামী ১০বছরে মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর নামের দুটি উপজেলা বিলেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফাউজুল কবীর বলেন, বন্যা পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী, বন্দবেড়, যাদুরচর ও রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের প্রয়োজনী  ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী, এভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অদুর ভবিষৎতে মহান মুক্তিযুদ্ধের মুক্তঞ্চল হিসাবে পরিচিত রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের মানচিত্র হতে বিলিন হয়ে যাবে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীব্র ভাঙ্গনের কথা স্বীকার করে বলেন, ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার জন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখেছি।
বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার ব্যাপী স্থায়ীভাবে ব্রহ্মপুত্রের বামতীর সংরক্ষনের কাজ এবং ২৫ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ প্রায় সাড়ে ৭শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরির কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প উপস্থাপনা এবং মন্ত্রনালয়ে দাখিল করা হবে।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর